কথা বলা এবং শোনা

মানুষের উচ্চারিত প্রত্যেকটি কথা আল্লাহর দরবারে সংরক্ষিত হয় (ক্বাফ ৫০/১৮)। তাই সদা উত্তম কথা বলা এবং কারো সাথে কথাবার্তা উত্তম বিষয়ে হওয়া উচিত।

একজন মহান ব্যক্তি বলেছেন, একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তখনই বলেন যখন তার কাছে বলার কিছু থাকে। অপরদিকে; একজন মূর্খ ব্যক্তি এজন্যই বলেন কারণ তিনি বলতে চান।“ কম কথা বলার অর্থ এই নয় যে, আপনি কম ভাবেন অথবা আপনি কম বোঝেন। কম কথা বলার অর্থ এও নয় যে আপনি অলস। অপ্রোয়োজনে বাড়তি কথা নয়, সেই একমাত্র স্রষ্টাকে স্মরণ করে সময় অতিবাহিত করুন।  

হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেন- ‘যে লোক আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’। (বুখারী হা/৬০১৮-১৯; মুসলিম হা/৪৭)। তিনি আরো বলেন, তোমরা জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাক, এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে লেও। যদি সেটা কেউ না পায় তাহলে সে যেন উত্তম কথা বলে ( বুখারী হা/৬০২৩, ৬৫৪০; মুসলিম হা/১০১৬; তিরমিযী হা/২৯৫৩; নাসাঈ হা/২৫৫২; মিশকাত হা/৫৮৫৭)। তিনি আরো বলেন,মানুষ তো তার অসংযত কথাবার্তার কারণেই অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (তিরমিযী হা/২৬১৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৩; ইরওয়া হা/৪১৩)।

“কথা কম, কাজ বেশি”। যারা জ্ঞানী হয় , তারা কথা কম বলে, শুনতে চায় বেশি, অন্যকে কথা বলার সযোগ দেই বেশি আর যারা অল্পজ্ঞানী হয় , তারা যেইটুকু জানে সেটাই প্রকাশ করতে চায়, সেটা সত্য মিথ্যারও যাচাই করে না।

আপনার সামনের ব্যক্তি যখন কথা বলার সুযোগ পায় তখন সে ভাবেনা যে আপনি মূর্খ ব্যক্তি। পৃথিবীতে ভালো শ্রোতার সংখ্যা খুবই কম। যেহেতু আপনি ভালো শ্রোতা তাই সামনের ব্যক্তি মনে করেন যে, আপনি তার কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। 
আসুন পড়ি, জানি, শুনি, বুঝি, অনর্থক ও অনুত্তম কথা বলা থেকে বিরত থাকি।  

সুস্থতা ও সময়

সুস্থতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতের কদর অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত অনুধাবন করা যায় না। সুস্থতা কত বড় নিয়ামত তা অনুধাবন করার জন্য একজন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে যেতে হবে। তিনি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন সুস্থতা তার জীবনে কত বড় নিয়ামত ছিল। কখনো কখনো সাধারণ রোগব্যাধিও এতটা যন্ত্রণাদায়ক হয়, রোগীর কাছে মনে হতে থাকে এই মুহূর্তে এই রোগটা থেকে মুক্ত হওয়া তার কাছে বিশ্বজয়ের চেয়ে বড় হবে। কোনো রোগ এমন আছে, যেগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মানুষ সারা জীবনের অর্জিত সব সম্পত্তি দিয়ে দিতে রাজি, কিন্তু পৃথিবীর সব কিছু দিয়েও তারা এক চিলতে সুখ কিনে নিতে পারে না।

 

আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সময়। এটি মহান আল্লাহতায়ালার এমন একটা সৃষ্টি, যা সবার জন্য সত্য; সব সৃষ্ট বস্তুর নির্দিষ্ট সময় বা আয়ু রয়েছে। বিশ্বজগৎ এক দিন শেষ হয়ে যাবে; এর জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া আছে। প্রত্যেক মানুষ দুনিয়ায় আগমন করেছে নির্দিষ্ট কিছু সময় নিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ের পর কোনো প্রাণী বা সৃষ্টির বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ্ কাউকেও অবকাশ দেবেন না।’ (সুরা মুনাফিকুন : ১১) সময়কে আমরা অবহেলা ভরে আজে বাজে কাজে ব্যয় করে থাকি। বেহুদা কাজে নিজেদের সময় সুস্থতাকে বিনিয়োগ করে মহাকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। একদিন এই সুস্থতা থাকবে না আর অবসরও থাকবে না। বিচিত্র নয়, একদিন এমন সময় আসবে যে, মাথার চুল ছিড়লেও এই সময় যৌবনকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। সেদিন আফসোসই হবে শুধু জীবন সাথী।

 কিন্তু বাস্তবতা হলো, দুটো নিয়ামতের প্রতি আমরা বড়ই অবহেলা করি। জন্যই প্রিয় নবীজি (সা.) সুস্থতা এবং সময় এ দুটি নিয়ামতের মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দুটিতে বেশির ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)